Jan 26, 2008

খামার প্রকল্পের অনুকল্পগুলো

এখানে ধ্যান করতে যারা আসত তারা বুদ্ধিমান, কেননা শালিক পাখির দল কোনো মন্দ বাক্য কখনো উচ্চারণ করেছে একথা কাঁঠাল চাষ প্রকল্পের একটা চারাগাছও বলতে পারবে না, পথিক দু’চারজন যারা আসেও বা এদিকে নিজেদের মধ্যে কথা বলে বলে তারা নারকেল বনের পথ ধরে, এখানে ধ্যান করতে যারা আসে তারা ভালোই করে

পাতাকুড়ানি যেসব কিশোরী পেয়ারা খেতে খেতে নিজেদের কথা সারে পরিত্যক্ত খামার ঘরে এবং যেসব স্কুলড্রেসপরারা সাদা স্কার্ফের থেকে বাইরে বেরিয়ে ঘাসপাতা নিয়ে আনন্দ করে, তাদের কারোরই এখানে ধর্ষিতা হবার আশঙ্কা নেই, একথা খাঁচা ও কাঁচি নিয়ে মাঠে বেরোয়াদেরও পর্যন্ত জানাশোনার মধ্যে পড়ে, যদিও মাঝেমধ্যে বেড়ারও খেত খাওয়া সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ও ধারণা এক জীবনে আমাদের অনেকের স্মৃতিতেই অমলিন হয়ে আছে

বস্তুত এখানে কোনো ধ্বন্যাধিক্য নেই, ধনিচা বনের মাঝে খেলারত পাখিদের কলরব ছাড়া, এখানে যারা প্রেম করতে আসবে তারা পরস্পরে লীন হয়ে রবে

২.
ঘুঁটেকুড়ানি বালিকার গা ঘেঁষে একটা পিক-আপ ভ্যান চলে যায় দ্রুত কোনো জরুরি প্রজেক্টে, সন্ত্রস্ত বালিকা গড়াগড়ি যায় মাঠে, দূর থেকে দেখি তাকে উদ্ধারে ছুটে আসে শুধু দু’য়েকটা শালিক পাখিই, ঘুঁটের সাথে যাদের আত্মীয়তা বহুজন জ্ঞাত

মাড়াইযন্ত্রের নিচে নাক ডেকে ঘুমায় খাকি পোশাক পরা খামাররক্ষক, রাখালদের মধ্যে লালজামা পরাটাকেই অল্প একটু চালাক-চতুর বলে মনে হলো, কখনো-সখনো যে হাতের পাজনের সাথেও কথা বলছে, কিন্তু তারও ওদিকে কোনো হুশ নেই, তাছাড়া গরুর লেজে ধরে টানছে যে মাঝবয়েসি, কালচে ল্যাদার নিচেই সে একদিন জীবন সঁপে দেবে

এটি একদমই অনুমান যে, ঘুঁটেকুড়ানির গরুর পিছেই হাঁটা সঙ্গত বলে পিক-আপের ধাক্কায় আহত বালিকার বিপক্ষে ‘বড়ো সড়কে উঠেছে সে শটিবন রেখে’ ধরনের অভিযোগ আনা হতে পারে, তবে বেপরোয়া পিক-আপটি থেকে যাবে অভিযোগমুক্তই, কেননা ওটির যিনি মালিক, খামার এলাকায় চরে বেড়ানো সব গরুদেরও তিনিই

কেশুতিপাতার মতো আমিও চাই না যে কোনো রক্তপাত পৃথিবীকে কলূষিত করুক, তাই শালিক পাখির দলে আমাকেও শেষে নাম লেখাতে হলো, গাছগাছালির দিকে খানিকটা ক্রলিং করে গিয়ে

৩.
বগলে ছাতা নিয়ে রৌদ্রে হাঁটতে হাঁটতে কালো গা ততধিক কালো করছে যেজন, পরনে তার শাদা ও সবুজ, সবার গায়ে যেহেতু সমান লাগে না রোদ আর ব্যবহারে ব্যবহারে হয় ছাতাদের আয়ুক্ষয়, এইমতো মিঠে রোদে চিরকাল ছাতারাম জয়ী হয়

কখনো ভাবিস না ক্যাচক্যাইচ্চা পাখি যে আমি খারাজুরা গাছতলে আসি জুতাখালি পায়ে, সহসা দৌড়ানো কোনো গরু নিয়ন্ত্রণে রাখালি কৌশলে জানিস পা চুলকানির বিরুদ্ধে করণীয় কাজও আমি মাঝেসাঝে করে থাকি, তুই তো জানিসই যে, যারা খামার ভালোবাসে, তোদের সব কাণ্ডকলাপ ভালো করে শিখে রাখে তারা

৪.
একা তালগাছ আমারও চেয়ে, আহা একা হওয়া, সাদাচুল সাদামেঘ শারদীয় দিনে, পাশে তার এতসব কাণ্ড ঘটে যায় ঈশ্বরের রাতেদিনে

‘যদি ওর শাবককে না-আঘাতি, ওর কী দায় আছে তবে আমাকে আঘাতে’-- গাভি বিষয়ক এই জটিলতা গাভি ও গাভির রক্ষকে গিয়ে থামে, শাবকেরা করে না কখনো ঠিক তবু কিন্তু করে, কিছুটা আগ থাকতে দায় নিয়ে ফিরে যায়

এবার গাভির পাশাপাশি তার বর্জ্যচিন্তাটা মনে জেগে ওঠে, কেননা গো-মলের ব্যবহার ঘরে ঘরে পবিত্র মেজাজে, মানুষ তার ব্যবহার্য তালিকা থেকে বলা চলে কিছুকেই প্রায় বাদ রাখে নি

মাঝেসাঝে আমারই মতো একা হয়ে দূরে যায় নগরীর দুপুরের চিল, দল ছেড়ে, পৃথিবীতে দেখা ও না-দেখা ম্যালা প্রাণী আছে, কখনো হয়ত সবাই একা হওয়া ভালোবাসে, ভালোবাসে গরুও যে দেখেছি স্বচোখে, মনে হয় গরুর অধিক দ্রুত মানুষও বোঝে না যে আমি খুব একলাপ্রিয়, একথা সে সহজেই বুঝে গিয়ে বড়োশ্বাসে বুঝান জানান দিয়ে পানিপথে দূর দিয়ে চলে গেছে, অবশ্য সকলে করে না এক এইটুকু মেনে নেয়া থেকে যায়, মনে ভবিদৃশ্য চমকে চমকে ওঠে, অথচ ভবিতব্য বুঝি না ঠিক কল্পনা ছাড়া

চিলেরা উড়ে গেলে গাভিও দূরে যায় তার শিং নিয়ে, রক্ষকও বিরক্ত করে না বড়ো, আমি তালগাছের মতো অত বুদ্ধু নই যে নিজের কাজ নিজে করব না, কিংবা দুগ্ধরূপিণী এই দেশে আর্তি করতে করতে হাসপাতালগামী অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আবারো মেশাব ঝাল চিন্তাব্যঞ্জনটাকে, তাই উঠে পড়ি পথ দেখি তেল এবং নুন সন্ধানে

No comments:

ওয়েবগ্রুপ

Google Groups
কবিতাকথা
Visit this group